পর্ব ১০
“এরকম ভাবতে ভাবতে যখন নতুন করে জ্বলে উঠবার প্রত্যয়ে শপথ লিখছে সে নিজেরই ভেতর, তখন সংক্ষুব্ধ আগুনের প্রপাতে একদিন মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে মাধবী। নিজেকে আবিষ্কার করে চা বাগানের কোয়ার্টারে। ওর মাথাটা ঘুরে ওঠে প্রচণ্ড বেগে। উঠে দাঁড়াতে যায়। রাতের গভীর অন্ধকারে ধাক্কা খেয়ে পড়তে গিয়ে পড়ে যায় যেন কারো গায়ের উপর। টের পায়না। পেছন থেকে কেউ একজন মাধবীর মুখে হাত দিয়ে তার চিৎকার করবার কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেয়। আর কেউ একজন চোখটা বেঁধে ফেলে।”
আজ রাতে পার্টি অফিসে চক্রবর্তী। দার্জিলিং এর সমতলে চা বাগানে মাধবী। ম্যানেজারের বাড়িতে বন্ধু চন্দনার সঙ্গ মাধবীকে এতটুকুও আনন্দ দিতে পারছেনা, এটা চক্রবর্তীর চেয়ে বেশি কেউ জানেনা। বরং ভেতরে চাপা ক্ষোভ, উত্তেজনার প্রখর প্রজ্বলনে পুড়ে পুড়ে মাধবীকে কতটা একজন বিপ্লবীর খাঁটি বউ করে তুলতে পারে সেটাই দেখবার রয়েছে সামনের সময়টাতে। উপরে চোখ মেলে তাকায় চক্রবর্তী। দ্বাদশীর চাঁদ। জোৎস্নার মায়ায় ভেসে চলেছে এই রাত। এই প্রহর। মুগ্ধ আবেশে যখন যুগলবন্দী থাকার কথা দুজনের, তখনই পালিয়ে পার্টি অফিসে চলে আসার এই দহন একদিকে, অন্যদিকে বিপ্লবকে সফল করবার জন্য নিবেদিত প্রাণ একজন কর্মীর মেধার সর্বোচ্চ প্রতিদানের বোঝাপড়া। পরিশ্রমের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে গণজাগরণ। এই তো বিপ্লবীর জীবন। নিজেকে মনে মনে প্রবোধ দেবার চেষ্টা করে চক্রবর্তী। আর ভাবতে চেষ্টা করে ওই জীবন্ত কিংবদন্তির পুরোটা জীবনকথা। চোখের সামনে জ্বলে জ্বলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া ‘চারু মজুমদার’ নামের একজন বিপ্লবীর মহত্তর সাধনমার্গের গল্প আজ এই জোৎস্নার আলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেন পৌঁছে যায় গভীর অন্ধকার থেকে উঠে আসা তীব্র আলোর মহাপ্রক্ষেপণে।
সমস্ত ভারতবর্ষ তখন জ্বলছে। ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাস, ভারতের উত্তর সীমান্তে জ্বলে উঠেছে যুদ্ধের আগুন। ম্যাকমোহন লাইনের দুই পাশের সীমানার একদিকে ভারত আর একদিকে চীন। কিন্তু যুদ্ধের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই চীনের আক্রমণে ভারতের সাড়ে তিনহাজার সোলজার বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে বসল। আর এই যুদ্ধ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বিভেদকে তুঙ্গে তুলে দিয়ে চরম বিভক্তিকে অবশ্যম্ভাবী করে তুললো। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা সোভিয়েতপন্থী, চীনপন্থী, মধ্যপন্থী দলে ভাগ হয়ে গেল। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যখন ‘চীনপন্থী’ আর ‘রুশপন্থী’ বিতর্ক চরম আকার ধারণ করেছে, তখন সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করল ভারত সরকার। রুশপন্থীদের দেশপ্রেমিক ও চীনপন্থীদের দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হল। দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় তৈরি হল ভারত-রক্ষা আইন। রুশপন্থীদের বাইরে রেখে চীনপন্থীদের ধরে ধেরে জেলে ঢোকানো হল। বছরের শুরু থেকেই সরকারের তৈরি করা সন্ত্রাসে ত্রাস সৃষ্টিকারী দেখিয়ে যে ধরপাকড় শুরু হয়েছিল তা থেকে বোধ করি অসুস্থতার জন্যেই চারু মজুমদারকে বাদ রাখা হয়েছিল। ততদিনে কৃষিবিপ্লব বিষয়ে চার নম্বর দলিল লিখে শেষ করেছেন তিনি। কিন্তু ঠিক পাঁচ নম্বর দলিল লিখে শেষ করার আগে আগে ভারত-রক্ষা আইনে গ্রেফতার এড়াতে পারলেন না। ১৯৬৩ সালে জেল থেকে বের হয়েই প্রথমে ডাঙ্গের ছবিটা দেয়াল থেকে একটানে নামিয়ে লাথি মেরে ভেঙে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন পার্টির নেতা কর্মীদের সামনে। বলেছিলেন :
– শত্রুর প্রতি তীব্র ঘৃণা না থাকলে বিপ্লবী হওয়া যায়না।
ছাড়া পেয়েই চলে এলেন শিলিগুড়িতে। যখন মূল দলের সাথে মতানৈক্য চরমে উঠলো, তখন দলের ভেতর অনেকেই মুখোশ পরে ছিলেন। চারু মজুমদারকে কোনঠাসা করার নীলনক্শা আঁকা হয়ে গিয়েছিল। কিছু নিবেদিত প্রাণ দলীয় নেতা কর্মী তখনও ছিলেন বটে। কিন্তু দলের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল অনেক ঘুণপোকা। তার মধ্যে প্রধানতম ছিলেন শ্রীপাত অমৃত ডাঙ্গের – পার্টি চেয়ারম্যান। ঘূণপোকা ক্রমান্বয়ে কেটে চলছিল বিপ্লবের লালপতাকা। কেটে চলছিল বিপ্লব সফল করবার প্রস্তুতিমূলক সব ছক। সোভিয়েত সংশোধনবাদ ও মাওবাদের পক্ষ অবলম্বনকারী দুই দলের মধ্যে যখন তুমুল বিতর্ক চলছে, চারু মজুমদার তখন থেকেই কট্টর মাওবাদী চিন্তার মানু্ষ। ১৯৬৪ সালে দল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লো। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই-এম) যে প্রস্তাব গ্রহণ করে তাতে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা উঠে আসে। চারু মজুমদার তখন বিপ্লবের সপক্ষে কিছু কথা বলেন। মুজফ্ফর আহমেদের সাথে তর্ক চলে চারু মজুমদারের;
– কৃষিবিপ্লব ঠিক কেমন দেখতে চাও তুমি?
– সে তো বহুবার করে বলে চলেছি আমি। আপনারা কেন যে বুঝতে পারছেন না…
তার কথা শেষ হয়না। মুজফ্ফর আহমেদ বলেন :
– না না, তুমি মুখে বললেই তো হবে না। কৃষিবিপ্লব কি করে সাধারণের কাজে দেবে, কেমন হবে তার কর্মপন্থা এ সম্পর্কে মুখে মুখে কেবল কথা বললেই চলবে না।
– কি করতে বলছেন আমাকে?
– তোমাকে দলিল দিতে হবে। পূর্ণাঙ্গ দলিলটি লিখিত আকারে পেশ করো পার্টির কাছে।
সেই থেকেই তিনি দলিল লিখবার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিছু সংগঠিত যুবকের সাথে কাজ শুরু করেন মেঘদূত সিনেমা হলের পাশের একঠি ভাঙা কাঠের ঘরে বসে। সৌরেন বসু, বিজন চৌধুরী, শৈলেন বল, প্রতাপ চক্রবর্তী, সুকুমার রায় এরকম বাঘা বাঘা যুবকদের নিয়ে পার্টি অফিসে ক্লাস চালাতেন। আর পুরো তরা্ই তঞ্চল জুড়ে জনগণতান্ত্রিক কৃষিবিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে থাকেন এদেরকে নিয়েই। পরবর্তীতে তাতে যোগ দেন দীপক বিশ্বাস, শান্তি পাল, পবিত্র সেন, ধবল ঘোষ প্রভৃতি নেতাও। দলিলও লেখা হলো। প্রথম দলিলেই পার্টির ফর্ম ভাঙলেন। তার স্পষ্ট নির্দেশ :
– প্রত্যেক পার্টি কর্মীকে অন্তত পাঁচ জনের একটি করে অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ তৈরি করে রাখতে হবে। তাতে পুলিশের কোনো লোক যেন ঢুকে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক শিক্ষা না থাকলে কাউকে পার্টির সভ্য করা যাবেনা।
সুগভীর বিশ্বাসে, আত্মপ্রত্যয়ে বলেছিলেন :
– এই সুশিক্ষিত সংগঠনই আগামী যুগে বিপ্লবী সংগঠনের দায়িত্ব নেবে।
দলের নেতা কর্মীদের অনেকেরই প্রশ্ন ছিল :
– বিপ্লবী কর্মীদের রাজনৈতিক শিক্ষা কি হবে?
চারু মজুমদারের উত্তর ছিল :
– ভারতের বিপ্লব প্রচার-আন্দোলনের প্রধান কথাই হলো কৃষিবিপ্লব সফল করা।
বিশেষত পার্টি চেয়ারম্যান এস এ ডাঙ্গের (সোভিয়েতপন্থী) ছিলেন পার্টিতে বিভেদমূলক সকল কাজের প্রণেতা। তিনি চীন ভারত যুদ্ধের সময় চীনপন্থী দেশদ্রোহীদেরকে প্রতিহত করতে সোভিয়েতপন্থী দেশপ্রেমিকদের আহ্বান জানান। তাই তার কাজের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া কিংবা ইন্টারোগেশন করা জরুরি মনে করলেন চারু মজুমদার। প্রথম দলিলে তিনি একই সাথে ডাঙ্গের বিরোধী গোষ্ঠীকেও আধুনিক সংশোধনবাদী বলে চিহ্নিত করলেন আর দল ত্যাগ করে বেরিয়ে এলেন। অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ গড়ে তুলতে হবেই। কৃষকের হাতে অবশ্যই তুলে দিতে হবে অস্ত্র। এছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নেই। অস্ত্র ছাড়া এই সংগ্রামের কোনো সফল পরিণতি হতে পারেনা। জোতদারের গোলা থেকে যাবতীয় অধিকার আদায় করার লক্ষ্যে লুণ্ঠন চালাতে গিয়ে প্রতিহত করতে এলেই করা হবে পাল্টা আক্রমণ। এই লক্ষ্যের কোনো বিচ্যুতি নেই। এই বিশ্বাসেই এগিয়ে যেতে থাকেন চারু মজুমদার। তার সাথে আছে চক্রবর্তীর মতো শত শত যুবকের দল। সারা ভারত জুড়ে পুরো দশক ধরেই চলছে খণ্ড খণ্ড আক্রমণ। সাথে চলছে ভারতের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর সরকারের হিংস্র আক্রমণ। প্রতিটি আক্রমণের বিরুদ্ধে কেবল নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের আওয়াজ রাখা হচ্ছে। কিন্তু এবার তিনি মাও সে তুঙের প্রোসেস অবলম্বন করতে চান :
– টিট ফর ট্যাট, স্ট্রাগল্।
কৃষকের পেটে ভাতের জন্য, গায়ে কাপড়ের জন্য, পিতা হয়ে সন্তানকে অসুস্থতায় ধুকে ধুকে মরতে না দেখার জন্য, ফসলের জন্য, নিজের জমি আদায় করার উদ্দেশ্য সফল করবার জন্য দরকার সমবেত সশস্ত্র প্রতি-আক্রমণ। যদিও ধিকি ধিকি আগুন জ্বলেই চলেছে শতাব্দী ধরে। এবার কেবল সেই আগুন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বার পালা। তিনি অনড়। তার সাথে রয়েছে কৃষক। শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। তার সাথে আছে ঘরপোড়া অসহায় শ্রমিক। সকল শোষিত বঞ্চিত উপজাতি। সাঁওতাল, ওঁরাও, মেচ, রাজবংশী কেউ বাদ নেই। যোগ দিয়েছে নবীন যুবক দল। শহরের সব তরুণ যুবক তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছেড়ে দলে দলে ছড়িয়ে পড়েছে রাজপথ থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে। প্রেসিডেন্সী কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যুবকেরা নেমে এসেছে সুবিধাবঞ্চিত তরাই অঞ্চলে। পাহাড়ের সমতলে যুগ যুগ ধরে যে উপজাতি কৃষক বংশ পরম্পরায় চাষ করে যাচ্ছে জমি, চা বাগান; কিন্তু শহরে বসে তার সুফল ভোগ করছে একদল জমির মালিক। ন্যায্য পাওনা বলতে আকালের কালেও যুবকপ্রতি দিনে মাত্র পাঁচ আনা। নারী শ্রমিকের চার আনা। আর কিশোর শ্রমিকের জন্য ধার্য ছিল ছয় পাই, যা দিয়ে সংসার তো দূরের কথা, একজনেরও পেট ভরতো না। খেটে খাওয়া মানুষগুলো জোতদারদের নিষ্পেষণে প্রায় শেষ অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু এরও অনেক আগে তরাই ডুয়ার্স আর অবিভক্ত উত্তর বাংলার কৃষক মজুরদের সংগঠিত করতে হাফপ্যান্ট ও শার্ট গায়ে কংগ্রেসী পিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে তুচ্ছ করে খালি পায়ে রূপকথার নায়কের মতো যুবক চারুর আবির্ভাব ঘটেছিল। সেই ১৯৫২ সারে পার্টির অনুগত এবং জলপাইগুড়ির শিক্ষিকা লীলা সেনগুপ্তাকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে চলে এসেছিলেন শিলিগুড়িতে। আজ চার দশক ধরে পথে পথে তিনি। এখনো পায়ে জুতো নেই, জেলে জেলে জীবনের অর্ধেকটা সময় কেটে গেছে। বন্দী অবস্থায় নানা অত্যাচারে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে লড়াই করে চলেছেন কৃষকের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জমির মালিক, জোতদারদের বজ্রমুঠি থেকে কৃষকের অধিকার আদায়ে বদ্ধ পরিকর আজ সারা ভারতের যুবসমাজ। এই সংগ্রামী যুবাদের পাশে দাঁড়িয়ে অজস্র জোৎস্নায় ভেসে যেতে যেতে চক্রবর্তী মাধবীর কথা ভাবতে গিয়ে নিজেকে খুব ছোট মনে হতে থাকে। এ তো বিপ্লবীর মন নয়। আরও কঠিন আরও কঠোর হতে হয় বিপ্লবীর মন। এরকম ভাবতে ভাবতে যখন নতুন করে জ্বলে উঠবার প্রত্যয়ে শপথ লিখছে সে নিজেরই ভেতর, তখন সংক্ষুব্ধ আগুনের প্রপাতে একদিন মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে মাধবী। ওর মাথাটা ঘুরে ওঠে প্রচণ্ড বেগে। উঠে দাঁড়াতে যায়। রাতের গভীর অন্ধকারে ধাক্কা খেয়ে পড়তে গিয়ে পড়ে যায় যেন কারো গায়ের উপর। টের পায়না। পেছন থেকে কেউ একজন মাধবীর মুখে হাত দিয়ে তার চিৎকার করবার কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেয়। আর কেউ একজন চোখটা বেঁধে ফেলে। তারপর টানতে টানতে তাকে নিয়ে চলে চা বাগান আর কিছুটা দূরের ঘন গাছের মাঝ দিয়ে। কোথায় নিয়ে চলে কেউ জানে না। কেবল ছায়াচ্ছন্ন নিকষ কালো বিশাল বিশাল বৃক্ষরাজির গভীর তল থেকে নিশিথের একটানা পাতা ঝরার শব্দ ভেসে আসে- সর সর সর…
[চলবে]
পূর্ববর্তী পর্ব ৯
http://www.teerandaz.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF-2/?fbclid=IwAR1IyOGeIGScLl2b6dUogjhQN6rVTDEqdQvNJHXvnd715ng7EDA5AGWjiFw